1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০২:৩১ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

পদ্মা সেতু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের মাইলফলক – ড. মোহাম্মদ আবু তাহের

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০২২
  • ২৩৬ বার পঠিত

উইনস্টন চার্চিল বলেছেন বিজয় চার ধরনের (১) সামরিক (২) রাজনৈতিক (৩) সামাজিক (৪) সাংস্কৃতিক। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছিলাম তা ছিল সামরিক। বাকী তিনটি বিজয় অর্জন পুরোপুরি সমাপ্ত হয়নি। আমাদের রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভক্তি, সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে বড় বাধা আমাদের জাতীয় প্রশ্নে অনৈক। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের আরও অনেক এগিয়ে যেতে হবে। আমি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা অর্থনীতির বিশ্লেষক নই। পদ্মা সেতুতে কত টাকা খরচ হয়েছে বা কত টাকা খরচ হওয়া উচিত ছিল তা আমার লেখার বিষয়বস্তু নয়। পদ্মা সেতুকে ঘিরে আমার সুকান্তের পংক্তিগুলো বার বার বলতে ইচ্ছে করে “সাবাস বাংলাদেশ, এই পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলেপুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়।” বাংলাদেশে এখন যে কোনো গ্রামের কোনো অনুষ্ঠানে গেলেও একজন দর্শক পাওয়া যাবে না যার পরণে মলিন ছিন্ন বস্ত্র। প্রায় সব কিশোর তরুণকে দেখা যাবে জিন্স প্যান্ট পরে। গ্রামের স্কুলের কিশোর কিশোরীরা স্কুল ড্রেস পরেই বিদ্যালয়ে যায়।

প্রকৃতপক্ষে আমাদের এই সমুদয় উন্নয়নের মূল ভূমিকা রেখেছে আমাদের মহান স্বাধীনতা। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার অন্যতম মূল চেতনাই ছিল অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। পদ্মা সেতু আমাদের সেই স্বাধীনতা অর্জনের পথ সুগম করে দিয়েছে। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলই নয় সমগ্র বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, দেশের অগ্রগতির প্রতীক। পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিদেশী কুটনীতিকগন। ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতু নাওকি গণমাধ্যমে বলেছেন পদ্মা সেতু বাংলাদেশের আস্থার প্রতীক। তিনি আরো বলেছেন এই সেতু শুধু বাংলাদেশ নয় গোটা ভারত উপমহাদেশে আঞ্চলিক যোগাযোগে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। অর্থনীতিবিদদের মতে ঢাকা থেকে মাওয়া-জাজিরা-ভাঙ্গা-পায়রা-কুয়াকাটা-যশোর-খুলনা-মোংলা পর্যন্ত সুবিস্তৃত একটি ইকনোমিক করিডোর হিসেবে দেশের অর্থনীতির দ্বিতীয় সর্বোত্তম লাইফ লাইনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে মোটেও সময় নেবে না। ঢাকামুখী অভিবাসন স্্েরাত নিরসনেও এ করিডোর তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইচ্ছে থাকা সত্তে¡ও দেশের অনেক মানুষ বিশাল নদী পাড়ির ঝামেলা এড়াতে অনেকেই যেতেন না পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি জেলায়, যেখানে রয়েছে ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর অসংখ্য স্থাপনা যা দেশী বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। কিন্তু প্রমত্তা পদ্মার কারণে সবকিছুই ছিল আকাশ সমান দূরত্বে। এখন এই সেতুকে ঘিরে পর্যটন খাতে নয়া বিপ্লবের স্বপ্ন দেখছে বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের মানুষ। রাজধানী ঢাকা থেকে সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় ৫শ কিলোমিটার। এক্ষেত্রে মাত্র ২৬৬ কিলোমিটার দূরত্ব কোয়াকাটার। এত কাছে থেকে কোয়াকাটা দেশী বিদেশী পর্যটকদের মনযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি কেবল পদ্মা নদীর কারণে। পদ্মা নদী দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষকে বাংলাদেশে অন্যান্য মানুষ থেকে আলাদা করে রেখেছিল। এখন কুয়াকাটার পাশাপাশি পটুয়াখালির কলাপাড়ার স্থাপিত পায়রা সমুদ্রবন্দর নিয়েও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে দক্ষিণের মানুষ। এখন বিপুল বিনিয়োগের আশা নিয়ে আসতে শুরু করেছে দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও শিল্প গ্রæপগুলো, পর্যটকদের ভিড়ে এখন মুখরিত হবে সমুদ্র সৈকত। পদ্মা সেতু শুধুমাত্র দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাকেই বদলে দেবে না, বদলে দেবে অর্থনীতিকেও। বাড়বে দেশের মানুষের কর্মসংস্থান, বাড়বে মানুষের আয়, হবে দারিদ্র বিমোচন।

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সামনে আলোর ঝলক দেখিয়েছে। বাংলাদেশের বিজয়কে নিস্প্রভ করতে স্বাধীনতার পরে যারা বলেছে এদেশের ভবিষ্যৎ নেই, তলাবিহীন ঝুড়ি বলারও ধৃষ্টতা দেখিয়েছে ওরা। বাংলাদেশের জনগণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে আবারও প্রমাণ করেছে এ দেশ অন্ধকারাছন্ন নয়, এদেশের সাহসী মানুষের সামনে অপেক্ষা করছে আলোর ঝলক। জিডিপিতে সবচেয়ে বেশী প্রবৃদ্ধি অর্জনের সাফল্য দেখাচ্ছে যেসব দেশ বাংলাদেশও সেই অনেক দেশের ওপরে স্থান করে নিয়েছে। গাব্রিয়াল গার্সিয়া মার্কেল বলেছিলেন মানুষের পরাজয় মেনে নিতে আমি অস্বীকার করি, মানুষের পরাজয় নেই তা এজন্য যে, তার ভাষা আছে, তা এজন্য যে, তার আত্মা আছে। বাংলাদেশের মানুষও বারবার প্রমাণ করেছে এদেশের মানুষ পরাজয় কি তা জানে না। এটা স্বীকার করতেই হবে পদ্মা সেতু বাংলাদেশে সক্ষমতার প্রতীক, গৌরবের প্রকল্প। দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। পদ্মা সেতুর কারণে দেশের জাতীয় অর্থনীতি গতিশীল হবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর একটি মূল্যবান উক্তির মাধ্যমে লেখাটি শেষ করছি- ছোটরা অন্ধকার দেখে ভয় পাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বড়রা যখন আলোর দিকে তাকাতে ভয় পান তখন সেটি সত্যি ভয়ংকর।

 

কলামিষ্ট ও গবেষক।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..